ঈদে ৯ দিনে কোটি টাকা আদায়, দায় নিতে নারাজ পরিবহন মালিক সমিতি
ভিন্ন ভিন্ন স্লিপে প্রতি পরিবহন থেকে ১০০ টাকা চাঁদা আদায় হচ্ছে বরিশালে।
এবারের ঈদে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যানবাহন থেকে কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে বরিশালে পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতি ও জেলা বাস গ্রুপের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের টার্গেট করে এ টাকা তোলা হয়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মালিক সমিতির নেতারা। পুলিশও বলছে, চাঁদাবাজি কেউ করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, বরিশাল কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের সামনের সড়ক ধরে ঈদের আগে ঢাকা থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে। এ হিসাবে ১শ টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করলে প্রতিদিন আদায় হয় ৫ লাখ টাকা। ঈদের আগে ও পরে মোট ১০ দিন এই চাঁদা উত্তোলন অব্যাহত রাখার টার্গেট নেয় জেলা বাস মালিক গ্রুপ। আর এই ১০ দিনে শুধু বাস থেকে চাঁদা আদায় হয় ৫০ লাখ টাকা।
অন্যদিকে ঢাকা থেকে বরিশালের বিভিন্ন রুটে মাইক্রোবাসও চলে প্রায় তিন হাজারের মতো। এতে ১০ দিনে চাঁদা আদায় হওয়ার কথা আরো প্রায় ৩০ লাখ টাকা। টার্মিনাল সংলগ্ন কবি মুকুন্দ দাস কালীবাড়ি মন্দিরের সামনে ভিন্ন তিনটি স্লিপে এই টাকা আদায় করেন জসীম, মিরাজ, রানা এবং নাজিম নামে চার ব্যক্তি। সংগঠন পরিচালনা ও সার্ভিস চার্জের নামে গাড়ি প্রতি বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের স্লিপে ৩০ টাকা, বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের স্লিপে ৩০ এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনের স্লিপে ৪০ টাকা করে পার্কিং ফি হিসাবে আদায় করা হয়।
চাঁদা উত্তোলনকারীরা সাংবাদিকদের জানান, বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে’র নির্দেশে তারা এই চাঁদা তুলছেন। বাস ও মাইক্রোবাসে প্রতি তিনটি স্লিপে ১শ টাকা করে নেওয়া হয়। চাঁদা তোলা ছাড়া এ বিষয়ে আর কিছুই জানা নেই বলে দাবি করেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভ্যন্তরীণ রুটের কয়েকজন মিনিবাস মালিক জানান, ঈদের তিনদিন আগে থেকে তিনটি স্লিপে ১শ টাকা করে চাঁদা তুলতে শুরু করে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে’র লোকজন। কিন্তু তিনি প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
এ বিষয়ে কিশোর কুমার দে’কে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেন বলেন, শ্রমিক ইউনিয়নের স্লিপে কোন চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে না। সংগঠনের নামে যারা চাঁদাবাজির সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে একই ভাবে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার পরিবহণ থেকে সংগঠনের উন্নয়নের জন্য চাঁদা তুলছে পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতি। গাড়ি প্রতি মালিক সমিতি বাবদ ৪০ ও সিটি টোলের নামে ৪০ টাকা করে উত্তোলন করা হয়। শুধু এই দুইখাতে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে। এছাড়া ঈদ বখশিসের নামে ২০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে ঈদের তিনদিন আগে বুধবার থেকে শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা মালিক সমিতির নামে পরিবহন থেকে কলম্যান কালাম, হারুন ও শাহিনসহ চার-পাঁচজন মিলে এই টাকা আদায় করেছে বলে সংশ্লিষ্ট পরিবহনের মালিক ও শ্রমিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মমিন উদ্দিন কালু বলেন, শুধু মালিক সমিতি ও সিটি টোল ছাড়া অন্যখাতে কোন টাকা নেয়া হচ্ছে না।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলামের ভাষ্য, কোনো ভাবেই সড়কে চাঁদাবাজির নিয়ম নেই। যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply